স্টাফ রিপোর্টার ॥
ঘূর্ণিঝড় রেমাল প্রভাবে টানা বর্ষণে বরিশাল বিভাগে কৃষি খাতে ৫’শ ৮ কোটি, মৎস্য সম্পদে ২’শ ১৭ কোটি টাকার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল অঞ্চল ও মৎস্য অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় থেকে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের নিকট প্রেরিত ওই তথ্যে জানানো হয়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ১ লাখ ৮০ হাজার ৪৮১ কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গত রবিবার থেকে দক্ষিণ উপকূলে কখনো ভারী, কখনো মাঝারি টানা বর্ষণ হয়। এই সময়ে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক এলাকার আউশ (বীজতলা ও আবাদসহ), চীনাবাদাম, মরিচ, মুগ, তিল, শাক সবজি, পাট, পান, কলা, পেঁপেসহ বিভিন্ন ফল রয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারের মধ্যে প্রান্তিক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষক রয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজারের মতো।
বিভাগে প্রাকৃতিক দুর্যোগ রেমাল ও অতিবৃষ্টির কারণে ৯০ হাজার ৭৯৮ হেক্টর ফসলি জমি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২ হাজার ৭৮৯ হেক্টর জমি। এছাড়া আংশিক থেকে ১৫ হাজার ৪৮৯ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। ফলে ১৮ হাজার ২০৯ হেক্টর ফসলি জমি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্তের হিসেবে গিয়ে দাঁড়াবে।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে আর এতে উৎপাদনে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিকটন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যা মূল্যে ৫০৮ কোটি টাকার বেশি। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক শওকত ওসমান জানান, মাঠে থাকা আউশ ধানের ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক এ ছাড়া সবজিরও ক্ষতি হয়েছে রেমাল এর তান্ডবে।
আমরা চুড়ান্ত যে হিসাব মাঠপর্যায় থেকে পেয়েছি, তাতে আর্থিক হিসাবে ৫’শ ৮ কোটি টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
অপরদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে বিভাগের ৬ জেলায় ৯ হাজার ৮ হেক্টরের ৯৩ হাজার ৮৮২ টি পুকুর, দিঘী ও ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ২২ হেক্টর আয়তনের ১২০ টি খামার (কাঁকড়া/কুচিয়ার) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আর এতে মৎস্য বিষয়ক সম্পদের মোট ক্ষতির পরিমাণ ২১৭ কোটি টাকার ওপরে। মৎস্য অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ পরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বিভাগে পুকুুর, ঘের, ছুইচ গেটের মতো অবকাঠামোর ক্ষতি সাধনের পরিমাণ ৩১ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
আর যার মধ্যে খামার, পুকুুর, দিঘী ও ঘেরের ক্ষতির কারণে বিভাগ জুড়ে দেড়শত কোটি টাকার অধিক মূল্যের ৭ হাজার ৯২ মেট্রিকটন মাছেরই ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া ১৫৯ মেট্রিকটন চিংড়ি, প্রায় ৭ কোটি পোনা এবং ৬৯ মেট্রিকটন কাঁকড়া/কুচিয়ার ক্ষতি সাধন হয়েছে। অপরদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ রিমালে কোন জেলে নিহত হওয়ার খবর মৎস্য দপ্তরের কাছে না থাকলেও ৩১ জেলে আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
এছাড়া সাড়ে ৩ কোটি টাকার অধিক মূল্যের ১ হাজার ১৯ টি নৌযান (নৌকা/ট্রলার/জলযান) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সেইসাথে প্রায় আড়াই কোটি টাকা মূল্যে ৮৯৪টি জাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান।